দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।রোববার (৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও অ্যাকাডেমিক ভবন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে কয়েকটি সড়ক ঘুরে ছাত্রীদের হলের সামনে দিয়ে প্যারিস রোড হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের মহাসড়কে যান। এ সময় সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প হিসেবে যানবাহনগুলো নগরীর খড়খড়ি বাইপাস হয়ে চলাচল করে।
এ সময় তারা ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই ‘, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘ধর্ষকদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ধর্ষকদের শাস্তি, মৃত্যু মৃত্যু!’, ‘We Want Justice’, ‘তুমি কে আমি কে, আছিয়া, আছিয়া’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয় চারপাশ।এ সময় হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, একটার পর একটা ধর্ষণ হয়ে যাচ্ছে। কুমিল্লার তনু থেকে শুরু করে আজকে আছিয়ার ধর্ষণ, কিন্তু আমরা কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে পাইনি। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্ষকের পরিপূর্ণ শাস্তি কার্যকর করতে পারেনি। এটা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতা। আমি এই ইন্টেরিম গভর্নমেন্টকে বলে দিতে চাই, আপনারা যদি ধর্ষকের শাস্তি দিতে না পারেন তাদের জনগণের হাতে ছেড়ে দিন। তারা মা বোনের ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করবে।
তিনি আরও বলেন, একজন ধর্ষক শুধু দৈহিকভাবে একটা মেয়েকে শেষ করে না, ধর্ষণের কারণে আজ আছিয়া মৃত্যু পথযাত্রী। কিন্তু এমন অনেক বোনেরা আছেন যারা বিচার চাওয়ার সাহস পর্যন্ত করতে পারেন না। তারা তিলে তিলে নিজের মনের মধ্যে কুঁকড়ে কুঁকড়ে মরে যান। একজন ধর্ষিত নারীর প্রতিটি দিন কতটা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে শুধু সে-ই বলতে পারে। আমরা তা পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করতে পারব না।এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আপনারা যদি সারা দেশে চলমান ধর্ষণের কোনো উল্লেখযোগ্য বিচার করতে না পারেন, তাহলে শেখ হাসিনার অবস্থাটা মনে করিয়ে দিতে চাই। আমাদের যেন আবার এক দফা নিয়ে নামতে না হয়। আছিয়ার ধর্ষণের দোষ সরকার এড়াতে পারবে না। রাজশাহীতে যদি কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তাহলে রাজশাহী প্রশাসনও দায় এড়াতে পারবে না। যত দ্রুত সম্ভব ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু আছিয়া না এতদিন যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সব ঘটনার বিচার করতে হবে। আমাদের বোনদের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হোসাইন বলেন, দেশে এসব কী শুরু হয়েছে? সরকারের কাজ কী? এত এত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে কোনো বিচার নেই। তারা কি সবাই ঘুমাচ্ছে? সব ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যত দ্রুত সম্ভব ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধর্ষক যেন ছাড় না পায়। সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেন।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন